এবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। তীব্রতাও বেশ। প্রতিবছর বর্ষাকালে, এপ্রিল-মে থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অবধি চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ বছর ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। পরিবারে কারও ডেঙ্গু হলে আতঙ্ক নয়, চাই সতর্কতা ও সচেতনতা। বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বরই নিজে নিজে সেরে যায়। প্যারাসিটামল, বিশ্রাম ও যথেষ্ট তরল ছাড়া এর কোনো চিকিৎসাই লাগে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মোড় নেয়, যা রোগীর জীবনকে বিপন্ন করে তোলে।
ডেঙ্গুর উপসর্গে ভিন্নতা
এ বছর ডেঙ্গু জ্বর ভিন্নমাত্রা ও উপসর্গ নিয়ে দেখা দিচ্ছে।
- সচরাচর টানা পাঁচ–ছয় দিন জ্বর থাকে। কিন্তু এবার অপেক্ষাকৃত কম সময় ধরে জ্বরের পরই হঠাৎ ক্রিটিক্যাল ফেজে মোড় নিচ্ছে।
- র্যাশ বা গায়ে ব্যথার পরিবর্তে কাশি, পাতলা পায়খানা, বমির মতো নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
- দ্রুত এসজিপিটি ও ক্রিয়েটিনিন বাড়তে থাকা, কারও কারও লাইপেজ বেড়ে যাওয়া।
- মাল্টি অর্গান ফেইলিউর বা বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত হানা (যেমন কিডনি ফেইলিউর, যকৃতের সমস্যা, মায়োকার্ডাইটিস), বুক ও পেটে পানি জমার মতো জটিলতা।
- অনেকের ডেঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও রক্তে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন নেগেটিভ থেকে যাওয়া।
এ ধরনের নতুন বিশেষত্ব নিয়ে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। তৃতীয় বা চতুর্থবারের মতো আক্রান্ত হওয়ার কারণেই তীব্রতার এ মাত্রা। তাই এ সময় জ্বর হলেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
আতঙ্ক নয়, সচেতন হোন
ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে যথেষ্ট বিশ্রাম নিন। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খান। প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ করুন। নিজে নিজে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক খাবেন না। মনে রাখবেন, জ্বর সেরে ওঠার সময়টুকুতে বেশি সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এ সময়ই জটিলতাগুলো দেখা দিতে থাকে। তাই জ্বর কমার সঙ্গে সঙ্গে কাজে যোগ দেবেন না। বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে থাকুন। মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, দুর্বল লাগা রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ। মনে রাখবেন, পালস প্রেশার ২০–এর নিচে মানে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের দিকে মোড় নিচ্ছে। প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নামলে বা হিমাটোক্রিট পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, ৫০ হাজারের নিচে নামলে হাসপাতালে ভর্তি হোন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হলে প্লাটিলেট দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এ ধরনের ডেঙ্গুতে প্লাজমা লিকেজ হয় (প্লাজমা শিরার বাইরে বেরিয়ে আসে)। তাই সতর্কতার সঙ্গে স্যালাইন ব্যবহার করতে হয়। এ জন্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। এ ছাড়া অনেক বমি, শরীরের যেকোনো জায়গায় রক্তপাত, রক্তচাপ কমে গিয়ে দুর্বল অনুভব করা, প্রচণ্ড পেটব্যথা, অতিরিক্ত অস্থিরতা ও অস্বাভাবিক আচরণ, হাত–পা শীতল হয়ে আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে নিন।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
আমাদের সম্পর্কে
সাইক ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাব
১৪, সুইডেন প্লাজা, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬